দূর প্রবাসে চিত্তবিনোদন

সুদূর প্রবাসের বাসিন্দারা প্রবাসে বসবাস করেও দেশের সংস্কৃতিকে মনের গভীরে সদা জাগ্রত করে রাখেন। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করি ঠিকই। কিন্ত প্রবাসীদের মনটা পড়ে থাকে গায়ের ঐ মেঠোপথে, যেখানে ভোরের আযানের শব্দ আর পাখির কিচির-মিচির আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা দুর্গম পথের যাত্রী। তথাপিও তারা দেশের সংস্কৃতিকে মুহুর্তের জন্য ভুলে থাকতে পারেনা।
কমবেশি সবার অন্তরে নিজ দেশের সংস্কৃতি রেখাপাত করে থাকে। ইচ্ছায় হোক আর অনিইচ্ছায় হোক হৃদয়ে লালিত সপ্নকে কখনও কখনও শৃঙ্খলে বন্দি রাখতে হয়।দূর প্রবাসে একজন প্রবাসীর কর্মব্যস্ততাময় জীবনে সকল রকমের আনন্দের সমাপ্তি হয়ে সেখানে সৃষ্টি হয় রুঢ়তা ও রুক্ষতা। এরকম পরিস্থিতিতে প্রবাসীর জন্য চিত্তবিনোদন অনেক গুরুত্ববহন করে।

প্রবাস জীবনে চিত্তবিনোদনের সুযোগ-সুবিধা খুব কমই থাকে। আনন্দ উল্লাসহীন মানুষের জীবন কঠিন হয়। সবকিছু পিছনে ফেলে প্রবাসীরা দেশীয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্যদান করে বেশি। চিত্ত বিনোদনের জন্য দেশ মাতৃকার প্রধান খেলা ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দিয়ে যায় সব সময়। যদিও বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু। কিন্ত বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার প্রবাসীরা আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বাহিনীর জার্সি গায়ে দিয়ে ছুটির দিনটি উপভোগ করে থাকে।
কর্মব্যস্ততায় মন এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্লান্ত শরীরকে সামান্য আনন্দ দেওয়ার জন্য খেলাধুলোর প্রয়োজন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮-১২ ঘন্টা কর্মস্থলে কাটানো সহজ বিষয় নয়। কাজের পর ঘরের কাজে সময় দিতে হয়। নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। এছাড়া বর্তমানে দেশের পরিস্থিতির কারণে চিন্তিত থাকেন প্রবাসীরা। একদিকে পরিবার নিয়ে চিন্তিত অন্যদিকে কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত মন । এমতাবস্থায় প্রবাসীর ক্লান্ত মনকে সতেজ করার চেষ্টা করা আবার অনেক সময় সম্ভব হয়না সময় এবং সুযোগের অভাবে। কাজের পর কাজ মূল পরিশ্রমের সীমানা পার হয়ে অতিরিক্ত সীমানায় গিয়েও শ্রম দেন প্রবাসীরা। মা-বাবা পরিবারের কাছে কিছু বাড়তি টাকা পাঠানোর জন্য। যার ফলে ক্লান্ত হয়ে যান দেশপ্রেমিক দেশের অংশ দূর প্রবাসের রেমিটেন্স সৈনিকেরা।
তবুও প্রবাসে থাকতে হবে নিজে এবং পরিবারকে সামাজিক ভাবে সচ্ছল করার জন্য। সচ্ছল হওয়ার প্রয়াস প্রবাসীদের মনে কাজ করে সব সময়। নিজেদের মনকে একটু ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন বিনোদন।

আমিরতের রাজধানী আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ সহ প্রতিটি স্টেটে বাংলাদেশী প্রবাসীরা বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের জার্সি গায়ে দিয়ে লাল সবুজের নিশানা উড়ান মরুর দেশে। প্রবাসীরা শুক্রবারে কাজের সাপ্তাহিক ছুটিতে ক্রিকেট বাহিনীর জার্সি গায়ে দিয়ে ছায়া ক্রিকেটার হতে একটুও কার্পন্য করেনা। লাল সবুজের ছায়া ক্রিকেট টিম হয়ে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে আসছেন প্রবাসীরা।আমার দেশের সবুজ ঘাস লাগানো মাঠ নয়। বালুময় মাঠে বালুর সাথে কিছুক্ষণ মিশে গিয়ে গায়ে বালু লাগিয়ে আমিরাতের মাটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমকে। ক্রিকেট খেলার নিয়মতান্ত্রিক চিৎকারে চিৎকারে মরুর হাওয়ার সাথে মিশে যায় বাংলাদেশের বাংলা শব্দ। প্রবাসীদের ক্রিকেট খেলা শুধু ক্রিকেটেই আটকা থাকে সেটা নয় বরং বৃদ্ধি পায় ভাতৃত্বের বন্ধন। আর এই বন্ধন থেকে সৃষ্টি হয় দেশ প্রেমের স্পৃহা। হাতে হাত রেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক মত পার্থক্য দুরে রেখে প্রবাসীরা দেশের জন্য কিছু করতে শিখে। দেশের মাটিকে নিয়ে ভাবতে শিখে।
এই ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে প্রবাসীদের দুটি লাভ হয়। প্রবাসীদের মনে যে কষ্ট থাকে সেটা কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকা যায় এবং ক্রিকেট মাঠে থাকার ফলে মিছে আড্ডায় জড়ানো থেকে দুরে থাকেন।

শুধু ক্রিকেট খেলা নয় আমিরাতের প্রবাসীরা নিজেদের মধ্যে ফুটবল খেলার আয়োজন করেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির উদ্যোগে ক্রিকেট, ফুটবল সহ দেশীয় খেলার আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। প্রবাসীদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আয়োজন করা হয় শিশু কিশোর, নারী পুরুষদের জন্য পিকনিক। আয়োজন করা হয় দেশের অন্যতম সংস্কৃতি পিঠা উৎসব। প্রবাসী শিশু এবং নারীদের জন্যও আলাদাভাবে খেলার আয়োজন করা হয়। তাছাড়া প্রবাসী পরিবার নিজ উদ্যোগে অনেক রকম খেলাধুলা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন মানসিকতা যদি সঠিক অবস্থানে না থাকে সুন্দর ব্যবহার প্রকাশে সফল হওয়া যায়না। মানব প্রেম না থাকলে সমাজে হানাহানি লেগেই থাকবে হরহামেশা। মন এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বিনোদনের সাথে সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন। সেই বিনোদন ক্রিকেট খেলার মধ্যে থাকুক কিংবা অন্য কোনো শালীন বিনোদনে ।যদিও অনেক প্রবাসীর কিন্তু এসব বিনোদনের বিন্দু পরিমাণ সুযোগ থাকেনা। প্রবাসের সীমাবদ্ধতা কেড়ে নিয়েছে চিত্তবিনোদনের সুযোগ। প্রবাসে অনেক কিছু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সম্পাদন করা সম্ভব হয়না।

প্রবাসীদের মনের দোয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের জয় হোক। বাংলাদেশের প্রবাসীদের মধ্যে ক্রিকেট প্রেম সৃষ্টির একটাই লক্ষ্য থাকুক দেশের মাটি ও মানুষের জন্য ভালবাসা। প্রবাসে দেশীয় সংস্কৃতি লালনের একটাই উদ্দেশ্য প্রবাসীদের মধ্যে অটুট থাকুক ভ্রাতৃত্ব। দূর প্রবাসে একে অন্যের পাশে থেকে হাসি কান্নার অংশীদার হওয়া খুবই প্রয়োজন। চিত্তবিনোদন পাশে থাকার খোরাক হয়ে কাজ করবে এই প্রত্যাশা করি।