আরব আমিরাতের নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা ‘আখিঁ’
![](https://uae.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/09/02/al_burak_garment_-_full_page.jpg?itok=RzW_u_wT×tamp=1599036620)
অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে নিত্যদিন ঘরে-বাইরে পুরুষের যেমন নিরলস সংগ্রাম চলছে, স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে তেমনি পিছিয়ে নেই নারীরাও। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী উদ্যোক্তা আঁখিও সেই সংগ্রামীদের একজন। পুরো নাম শেফালী আক্তার আঁখি। বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। কাকরধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল হেলাল উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে গুলশান বারিধারায় বে ইস্টার্ণ বায়িং হাউজে চাকুরি করেন এগার মাস। এরপর ২০০৩ সালের মে মাসে শারজাহ ফ্রি জোনের ভিসা নিয়ে প্রথম পা রাখেন আমিরাতে। একবছর কাজ করেন একটি কোম্পানির রিসিপশনে। এরপর স্বামী মাজহারুল ইসলাম মাহবুবের সহযোগিতায় শুরু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। নিজের বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সততা ও অদম্য ইচ্ছার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের উচ্চ শিখরে। কঠোর পরিশ্রমে অসাধ্যকে সাধন করা বাংলাদেশি এ নারী উদ্যোক্তা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন প্রবাসী নারীদের সাফল্যের মডেল। তাকে দেখে রীতিমতো অনুপ্রাণিত হন অন্যান্য নারী উদ্যোক্তারা। ব্যবসা সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ইতোমধ্যে আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকবার বিশেষ সম্মাননা পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।
পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবস্থান তুলে ধরে আখিঁ বলেন, ‘বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করার মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেলাই, বুটিক সহ হাতের কাজগুলো তারা ঘরে বসেই করছে। অনেকে বলে, আমিও আপনার মত কাজ করতে চাই। বিষয়টি বেশ অনুপ্রাণিত করে। আমার বিশ্বাস, যারা উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসবে তারা ভবিষ্যতে অবশ্যই সফল হবে।’
![](https://uae.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/09/02/emb.jpg?itok=8xfDUzFA×tamp=1599036345)
আমিরাতে সফল ব্যবসায়ী দপ্ততির খ্যাতি রয়েছে মাহাবুব-আখিঁ’র। স্বামী মাজহারুল ইসলাম মাহাবুবের বাড়ি দিনাজপুর গোরা ঘাট এলাকায়। তিনি আমিরাতে আসেন ১৯৮২ সালে। প্রথম এসে গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। পরে অরিয়েন গার্মেন্টস দিয়ে শুরু করেন ব্যবসায়িক কার্যক্রম। বর্তমানে মাহবুব গ্রুপ অব কোম্পানিজের ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আঁখি। তার মালিকানাধীন গ্রুপ অব কোম্পানির অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওরিয়েন্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, আল বোরাক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, কামিল টেইলারিং অ্যান্ড এমব্রয়ডারি এলএলসি, জাহারাত আল বুসতান মেইন্ট অ্যান্ড ক্লিনিং উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় ১৪৫ শ্রমিক।
সময়ের পালাক্রমে সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়া আঁখি বলেন, ‘যখন আমিরাতে আসছিলাম, অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। কিন্তু নিজে থেমে থাকিনি। বলতে গেলে কেউ রাজি ছিল না বিদেশে আসি। শুধু নিজের জেদের ওপর নির্ভর করেই বেরিয়ে পড়ি। ইচ্ছে ছিল কিছু একটা করে দেখাব। সাফল্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ছোটবেলা ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালানোর আর এখন ল্যান্ড ক্লোজার চালাচ্ছি। দেশে-বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সব সম্ভব হয়েছে স্বামী মাহবুবের সহযোগিতার কারণে।’
আরব আমিরাতের বসবাসের খরচ বেড়েছে উল্লেখ করে আখিঁ বলেন, ‘এখন কিছুটা খরচ বেড়ে গেছে সকল ক্ষেত্রে। আইডিতে নবায়ন, ব্যাংক গ্যারেন্টি, লাইসেন্সে বাড়তি টাকা, ভিল্লা’র (বাসা) সামনে রাস্তা করার টাকা, অন্যদিকে ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজ দেশের শ্রমিক না পাওয়ায় ভিনদেশি শ্রমিকের পেছনে অতিরিক্ত খরচ এগুলো বাড়তি চাপ। কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,‘ আমিরাতে বর্তমান ব্যবসার পরিধি থেকে আর না বাড়িয়ে এবার দেশে ব্যবসা গোছানোর পরিকল্পনা করছি। দেশের প্রোপার্টিগুলো নিয়ে ভাবছি। আবাসন প্রকল্প, ইট-ভাটা চালু করবো শিগগিরই।’ ব্যবসার পাশাপাশি শেফালী আক্তার আখিঁ একজন দক্ষ ও সফল সংগঠক। তিনি ফরিদপুর কাকরধা গ্রামের মোহাম্মদ আলী হোসেন হাওলাদার ও লালবড়ু বেগমের সন্তান।